Fan Post on Sunday by Arpita Sarkar

তোমার চিঠির না দেওয়া উত্তর

আবার আজ একবছর পর তোমাকে চিঠি লিখতে বসলাম ।শুনে আমার ছেলে মেয়েরা হাসবে । ভাববে হোয়াটস আপ আর মোবাইলের যুগেও চিঠি চলে নাকি । মা ভীষণ ব্যাক ডেটেড ।তবে তাই হোক । তুমিও চিন্তা করো না এ চিঠি পৌঁছাবে না তোমার কাছে ।এ লেখা থাকবে আমার ফুল আঁকা কাঠের বাক্সের নিচের তাকে । গতকাল ছিল ভালোবাসা দিবস ,ছেলে-মেয়েরা সব ফুল গিফ্ট কিনে ভালোবাসার মানুষের সাথে দেখা করেছিল । তোমার মনে আছে সুনয়ন! তুমি সেই তোমার রংচটা সাইকেলটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে আমাদের গার্লস স্কুলের সামনে ।আমি বেরোতাম শাড়ি পরে ।চুলে তখন ফিতের ফুল , কপালে ছোট টিপ ।চোখের কোনে কাজল তো আঁকলাম সেই কলেজে উঠে । আমি বুঝতাম তুমি আমাকে এক নজর দেখবে বলেই দাঁড়িয়ে থাকতে ,আর ঝুমা বলতো ও নাকি তোমাকে ভালোবাসে । কি ভীষণ রাগ হতো তখন তোমার ওপর ।তুমি কেন মুখফুটে বলতে না তুমি ঝুমাকে নয় শুধু রঞ্জনাকে দেখবে বলেই অপেক্ষা করতে । আমি না হয় লজ্জা পেতাম ,তুমি তো পুরুষ মানুষ তুমি কেন এত মুখচোরা ছিলে !! সেদিন স্কুলে ব্রতচারীর ক্লাস শেষ করতে দেরি হয়েছিল বেশ ।ঝুমা আসেনি স্কুলে …গেটের বাইরে বেরিয়ে এদিক ওদিক খুঁজছিলাম তোমাকে ,ধুর দেরি দেখে হয়তো চলে গেছো অবশেষে । কিছুটা এগোতেই বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল , তুমি ঠিক আমার পাশে এসে বেল বাজিয়ে জিজ্ঞেস করলে ,তুমি কি আমাকে খুঁজছিলে রঞ্জু । রঞ্জনা নয় রঞ্জু বলে ডেকে ছিলে তুমি ।সেই প্রথম তোমার গলার আওয়াজ এসে পৌঁছেছিল আমার প্রতিটা তন্ত্রীতে । অবশ আমি ,অবশ আমার উত্তরের ভাষা ।মিথ্যে বলেছিলাম সেদিন ,আমার বান্ধবী নুপুরকে খুঁজছিলাম.. বলেই পা চালিয়েছিলাম । তারপর তোমাদের ঐ রায়দিঘীর মাঠের ফুটবল ম্যাচের দিন তোমার সাকরেদ বিদ্যুৎ আমার কানে কানে এসে বললো ,দিদি তুমি খেলা দেখতে না গেলে সুনয়নদা একটা গোলও দেবে না ।আমি বললাম ,তো তোমার দাদা গোল দেবে কি দেবে না তার আমি কি জানি ? সেতো তখন আমার কানে খবর টা দিয়েই হাওয়া । বিকেলে আমি ,নুপুর আর ঝুমা তিনজনে গেলাম তোমাদের খেলা দেখতে । তোমার সাথে চোখাচোখি হতেই তোমার মুখ খুশিতে ভরে গেল । তুমি কমলা ,কালোর জার্সি পরে বল পায়ে ছুটছিলে । তোমার কলেজে আমি যখন ভর্তি হয়েছিলাম ,তুমি তখন থার্ড ইয়ারের হিরো । কলেজে আমাকে দেখে তোমার ভয় কাটিয়ে এগিয়ে এসে বলেছিলে … কেউ কোনো বাজে কথা বললে যেন তোমাকে জানাই। মাত্র একটা বছর কলেজ জীবন … বিয়ের দিন স্থির হবার পর তুমি নুপুরের কাছে একটা চিঠি দিয়েছিলে ।সেটাকে চিঠি না বলে টুকরো কথা বলাই ভালো ।তুমি লিখেছিলে , আর বছর দুয়েক অপেক্ষা করতে পারতে তো রঞ্জু ।স্বপ্নগুলো একসাথে দেখতাম তাহলে.. ঐ ছোট্ট কাগজটা সেদিন জলে ভিজে গিয়েছিলো । আজও আছে আমার কাছে সেটা । আজ প্রায় কুড়ি বছর পরও এই দিনে আমি একটা করে চিঠি লিখে রাখি তোমাকে ,তোমার জন্মদিনের উপহার । তোমার ঐ চিঠির উত্তর সেদিন দিতে পারি নি ।এগুলো পৌঁছে দেবো আমি ওপারে চলে যাবার আগে । এখন আমি বড্ড গৃহিণী ,স্বামী ,ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার ,খামতি নেই কোনখানে । শুনলাম নাকি তুমি আসামে আছো ,বিয়ে করে ওখানেই সংসার পেতেছো।তোমার বৌ নিশ্চয় আমার থেকেও সুন্দরী !! হয়তো তোমারও চুলের রূপালী রেখারা ভুলিয়ে দিয়েছে সেদিনের একাদশ শ্রেণীর সেই রঞ্জুকে । হয়তো আর তোমার পায়ে ফুটবলেরা ছোটে না। আমি ভুলেছি নাচের সেসব বোল । সুনয়ন! কথা দিলাম ,পরের জন্মে অপেক্ষা করবো দু বছর নয় আরো অনেক বছর ।

সমাপ্ত

– Arpita Sarkar

17 thoughts on “Fan Post on Sunday by Arpita Sarkar

Leave a comment